Powered by Blogger.

Wednesday, January 29, 2020

পোষ্য যখন রঙিন মাছ : বাড়িতে রঙিন মাছ পোষার টুকিটাকি

0 comments

 

পোষ্য যখন রঙিন মাছ : বাড়িতে রঙিন মাছ পোষার টুকিটাকি


দক্ষিণ আমেরিকার সাহেবগুলো আমাদের কাতলা, কালবোসকেই না খেয়ে অ্যাকোয়ারিয়ামে রেখে পোষে! বোঝাই যাচ্ছে, স্বদেশে হোক বা বিদেশে রুই-কাতলার দর বেশ চড়ার দিকেই! তবে, এখনই পাতের মাছ অ্যাকোরিয়াম তুলে দরকার নেই আপাতত হাত মকশো করার জন্য বেশ কিছু রঙিন মাছ পুষুন চোখের সামনে জলতরঙ্গে রঙের খেলা দেখে পুত্র এবং কন্যা রত্নের স্কুলের ফিজ বা রেজাল্ট এর চিন্তা কমবে তাতে তবে মাছ তো আর বাড়ির উঠোনে বা ফ্ল্যাটের বাথরুমের  বালতিতে রাখতে পারবেন না তার জন্য একটা ভালো আধার দরকার যাকে ইংরেজিতে বলে অ্যাকোয়ারিয়াম আকোয়ারিয়াম সম্পর্কে সামান্য তথ্য জ্ঞানস্থ করা যাক

অ্যাকোরিয়ামের প্রকারভেদ


মাছ রাখার ভিত্তিতে অ্যাকোরিয়াম সাধারণত দুই প্রকারের হয়, কমিউনিটি বেসড অ্যাকোরিয়াম এবং স্পিসিস বেসড অ্যাকোরিয়াম কমিউনিটিতে একই প্রজাতির বা সম খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত মাছ থাকে যেমন গোল্ডফিস,কই, কার্প,অ্যাঞ্জেল প্রভৃতিআবার টেট্রা বা   এই মাছগুলো কমিউনিটি বেসড কিন্তু এদের গোল্ডফিসের সঙ্গে রাখা যায় না গোল্ড ফিসেরর সুন্দর লেজ এরা ফুটো করে দেয়

স্পিসিস বেসড অ্যাকোরিয়ামে কেবলমাত্র একটি মাছই থাকে কেননা এটি সমগোত্রীয় বা আসমগোত্রীয় কাউকেই সহ্য করতে পারে না তাদের সঙ্গে লড়াই শুরু করে দেয় এতে করে দুজনেই আহত হয় বা নিহত হয় অ্যারিজোনা, ফ্লাওয়ার হর্ন এই জাতীয় মাছ

জল ব্যবহারের ভিত্তিতে অ্যাকোরিয়াম তিন প্রকার হয় মেরিন ওয়াটার ট্যাঙ্ক, ব্রাকিশ ওয়াটার ট্যাঙ্ক , ফ্রেস প্লেন ওয়াটার ট্যাঙ্ক


মেরিন ওয়াটার ট্যাঙ্ক - যেখানে সমুদ্রের জল ব্যবহার করা হয় বা সাধারণ জলে এক বিশেষ ধরনের লবণ মিশিয়ে  মেরিন ওয়াটার তৈরি করা হয় এই ধরনের ট্যাঙ্ক বানানো খরচসাপেক্ষ ভারতের করালের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ফলে এই ধরনের ট্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাও অন্যরকম হয় এখানে সারদিন ইল , সামুদ্রিক কচ্ছপ প্রভৃতি রাখা হয়
ব্রাকিশ ওয়াটার ট্যাঙ্কনদী মোহনার জল ব্যাবহৃত হয় এখানে ট্যাঙরা, খলসে, ভেটকি প্রভৃতি মাছ এখানে রাখা যায়
প্লেন ওয়াটার ট্যাঙ্ক - বিশ্বে সবথেকে বেশি প্রচলিত এই ধরনের ট্যাঙ্কএর আবার তিনটি ভাগ রয়েছে
সফট ওয়াটার, মিডিয়াম হার্ড ওয়াটার এবং হার্ড ওয়াটার
সফট ফ্রেশ ওয়াটার অর্থাৎ বৃষ্টির জল এতে ডিসকাস,   অ্যাঞ্জেল প্রভৃতি মাছ রাখা যায়
মিডিয়াম হার্ড ওয়াটার অর্থাৎ কিছু সামান্য পরিমাণে আয়রন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি পদার্থ মিশ্রিত অবস্থায় জলে থাকে এতে গোল্ডফিস, কোইকর্প, ক্যাটফিস প্রভৃতি মাছ রাখা যায়
হার্ড ওয়াটার অর্থাৎ বিভিন্ন পদার্থের বেশি পরিমাণে মিশ্রণে প্রস্তুত জল এখানে চিগলেরদ গোত্রের মাছ রাখা হয়

খাদ্যাভ্যাসের নিরিখে চার ধরণের মাছের দেখা মেলে :


কার্নিভোরাস ফিস অর্থাৎ মাংসাশী মাছ
হাড়বীভোরাস ফিস অর্থাৎ শাকাহারী মাছ
ওমনিভোরাস ফিস অর্থাৎ একইসঙ্গে মাংসাশী এবং শাকাহারী মাছ
ইনসেকটিভোরাস ফিস  অর্থাৎ পোকামাকড়ভজি মাছ
মাছের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের চারিত্রিক গুণাবলীর কথা মাথায় রেখে আপনি নিজেই স্থির করতে পারবেন কাকে পুষবেন কাকে না

 মাছের অসুখ-বিসুখ :


মাছ জলজ মেরুদন্ডী প্রাণী অন্যান্য প্রাণীদের মতো মাছেরও অসুখ বিসুখ হয় আমরা যে সমস্ত মাছ অ্যাকোরিয়ামে পুষি, সেগুলি মূলত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের এদেরকে তাই খুব ঠাণ্ডা বা গরম আবহাওয়া যুক্ত পরিবেশে বেশিদিন বাঁচানো যায় না যেমন দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে মেলেহিল টাউডনামের মাছটি কলকাতায় এনে পুষতে গেলে মাছ অসুস্থ হতে পারে
মাছের অভ্যন্তরীণ অসুস্থতার জন্য বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং প্যারাসাইটদায়ী
()ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশনের ফলে মাছের শরীরে নানা জায়গা ফ্যাকাশে হয়ে যায় তারপর ক্রমশ সেই স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয় মাছটি অসুস্থ হয়ে মারা যায়
()ভাইরাস আক্রান্ত মাছকে ট্যাংকের থেকে সরিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ
()প্যারাসাইট ইনফেকশনে, পরজীবিরা মাছে দেহ থেকে রক্ত চুষে নিয়ে মাছকে মেরে ফেলে এরাও ওষুধ বাজারে মেলে 

একনজরে মাছের রোগের লক্ষণ প্রতিকার-


ফুলকার পচন: রক্তবাহী শিরাগুলো বন্ধ হয়ে যায় মাছের শ্বাসকষ্ট হয় মাছ জলের ওপর ভেসে ওঠে মাছকে লবণ জলে রাখুন

ফিনরট বা টেলরট (পাখনা লেজের পচন ):  প্রথম অবস্থায় মাছের গায়ে সাদা ছোপ দেখতে পাওয়া যায় সেখান থেকেই পচন শুরু হয় অবশেষে মাছটি মারা যায় মাছকে তুঁতে জলে রাখা দরকার

উদার (ড্রপসি): আঁশের নীচের শরীরের মধ্যে জল জমে পেট ফুলে ওঠে ড্রামে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর দ্রবণে কিছু সময় ছেড়ে রাখলে সুফল মিলবে  

মাউথ ফাঙ্গাস : সমস্ত ধরনের মাছের এই রোগ হতে পারে , বিশেষ করে যে সমস্ত মাছ গুলি সরাসরি বাচ্চা পাড়ে , যেমন গাপ্পি , মলি , প্লাটি ইত্যাদি এই রোগ হলে মাছের ঠোঁট দুটি সাদা হয়ে যায় , মাছ খাওয়া বন্ধ করে দেয় , মাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে , এই রোগ খুবই ভয়ঙ্কর এবং সংক্রামক রোগ অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে একটি মাছের হলে , বাকি সব মাছের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ , বিশেষ করে লাইভ বেয়ারার অর্থাৎ যে জাতের মাছ সরা সরি বাচ্চা পারে

কটন উল ডিজিজ: এই রোগ সমস্ত ধরনের মাছের হতে পারে এই রোগ হলে মনে হবে , মাছের গায়ে যেন তুলো আঁটকে আছে এই রোগ মাছের গায়ে এক বা একাধিক যায়গায় হতে পারে তবে এই রোগ মাছের মাথার কাছে বা লেজে বেশি হয় এই রোগ খুব ছোঁয়াচে  

টিউবারকিউলোসিস : সব জাতের মাছেরই এই রোগ হতে পারে এই রোগ হলে মাছ রোগা হয়ে যায় , মাছের পেট বসে যায় , মাছের খিদে কমে যায় , মাছের রঙ হাল্কা হয়ে যায় , অনেক সময় মাছের চোখ দুটি বড় হয়ে ঠেলে যেন বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে
সুইম ব্লাডার ডিসঅডার: এই রোগ টি পেট ফোলা রোগ নামেও পরিচিত এই রোগ সব জাতের মাছের হতে পারে এই রোগ হলে মাছের পেটটি ফুলে ওঠে , প্রাথমিক অবস্থায় মাছটি জলের মধ্যে সাঁতার কাটতে অসুবিধা হয় ,পরে রোগ টি বেড়ে গেলে মাছটি পেট জলের উপরে ভাসিয়ে মাথা নিচের দিকে করে ভাসতে থাকে মাছটি জলের ভিতরে যাবার চেস্টা করে একটু সময়ের জন্য নিচে যেতে পারলেও সামান্য সময় পরে আবার মাছটি জলের উপরে ভেসে যাবে এই রোগ খুব একটা ছোঁয়াচে নয়
আলসার ডিজিজ: সিউডোমোনাস ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমনে মাছের এই অসুখ করে থাকে এই রোগ সমস্ত জাতের মাছের হতে পারে , এই রোগ খুব খারাপ ধরনের , সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না করলে মাছের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এই রোগ হলে মাছের গায়ে ঘা বা  ক্ষত সৃষ্টি হয় , এই রোগের একটি অত্যন্ত খারাপ দিক হল , অনেক সময় এই রোগ মাছের শরীরের ভিতরেও হয় , যা আপনার মাছের লিভার এবং কিডনি নষ্ট করে দেয় ,কিন্তু আপনি বাইরে থেকে বুঝতেও পারবেন না
আবহাওয়া এবং অন্যান্য কারনে যে সমস্ত রোগ গুলি অ্যাকুরিয়ামের মাছেদের হয়ে থাকে , সেগুলি সম্বন্ধে  জেনে নেওয়া যাক অনেক সময় দেখা যায় মাছ অসুস্থ হয়ে পড়েছে কিন্তু কোন ধরনের রোগ হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না , ভালো করে ভেবে দেখবেন মাছ গুলি হয়তো কোন বাহ্যিক কারনে অসুস্থ হয়ে থাকতে পারে দেখে নিন কি কি বাহ্যিক কারনে আপনার অ্যাকুরিয়ামের মাছ অসুস্থ হতে পারে

()  হটাত করে জলের তাপমাত্রা কমে গেলে
()  অ্যাকুরিয়ামের জলে অ্যামোনিয়া বা নাইট্রোজেনের পরিমান বেড়ে গেলে
()  জলে ক্লোরিন থাকলে
(৪)  জলে অক্সিজেনের পরিমান কমে গেলে
()  জলে কোন  রকম বিষাক্ত কিছু পড়লে বা তার থেকে বিষক্রিয়া হলে 
()  অ্যাকুরিয়ামের অন্য মাছের দ্বারা আক্রান্ত হলে


No comments:

Post a Comment