Powered by Blogger.

Saturday, February 8, 2020

দুধের খাদ্যগুণ ও ভেজাল দুধ - ভেজাল ধরবেন কি করে ?

0 comments

milk-adulteration-milk-nutritional-value


দুধের খাদ্যগুণ ও ভেজাল দুধ


শুধু খাদ্যগুণের দিক দিয়ে নয়, খাদ্য বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে বিচার করতে গেলেও বোধহয় দুধ জিনিসটাকে সবার প্রথমে রাখা যায়। ব্রেকফাস্টের টেবিল থেকে শুরু করে ঘুমোতে যাওয়ার আগে, এক গ্লাস গরম দুধ আজও আমাদের দৈনিক খাদ্য তালিকার একটা অংশ। আর দুধ থেকে তৈরি রকমারি খাবারের সঙ্গে কার না পরিচয় আছে।
সাধারণত যে ধরনের দুধের সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন পরিচয় ঘটে তা হল টোনড মিল্ক, স্কিমড মিল্ক, ডাবল টোনড মিল্ক, ফুল ক্রিম মিল্ক ইত্যাদি। এদের মূলত পাউচ প্যাকেট পাওয়া যায়। তবে টেট্রাপ্যাকেটের মিল্কও আজকাল বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, এর প্রধান কারণ হল সেলফ লাইফ। টেট্রাপ্যাকেটের মিল্ক একটা বিশেষ পদ্ধতিতে প্রসেসিং ও প্যাকেজিং করা হয়। ফলে প্যাকেটজাত দুধ অনেক বেশি দিন পর্যন্ত ভালো রাখা যায়।
এছাড়া আরও বেশ কয়েক ধরনের মিল আছে, যেমন কাউ মিল্ক, বাফেলো মিল্ক,মীক্সড মিল্ক, স্ট্যান্ডার্ডাইসড মিল্ক, রিকম্বাইণ্ড মিল্ক  ইত্যাদি যেগুলো হয়তো আমরা অপেক্ষাকৃত কম শুনে বা দেখে থাকি।
দুধের প্রধান উপাদান হলো জল, ফ্যাট এবং সলিড নন ফ্যাটবা সংক্ষেপে  এসএনএফ। ফ্যাট নানা ফ্যাটি অ্যাসিডের সংমিশ্রণে তৈরি, এছাড়া রয়েছে ফসফোলিপিড, স্টেরলস। ভিটামিন এ,ডি,,কে ফ্যাটে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। সলিড নন ফ্যাটের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন,ল্যাকটোজ,মিনারেল, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, এনজাইম, পিগমেন্ট ইত্যাদি।
দুধের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট,প্রোটিন,ফ্যাট,মিনারেলস,ভিটামিন ইত্যাদি খুব সুষম মাত্রায় থাকে যা শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী।

দুধে কোন উপাদানের কি কাজ

প্রোটিন - প্রোটিন দেহ গঠনের কাজে সাহায্য করে, বাড়ন্ত বাচ্চাদের জন্য যা একান্ত প্রয়োজনীয়। দুধের মধ্যে যে প্রোটিন থাকে তা খুব উৎকৃষ্টমানের কারণ এতে এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড খুব বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়। এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড মানুষের শরীর নিজে থেকে তৈরি করতে পারে না । খাবার থেকেই সংগ্রহ করতে হয়।
ফ্যাট - দুধ বা দুধ থেকে তৈরি খাবারের যে বিশেষ ফ্লেভার পাওয়া যায় সেটা দুধের ফ্যাটের থেকে আসে।ফ্যাট থেকে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি পাওয়া যায়। ল্যাকটোজ - ল্যাকটোজ একপ্রকার কার্বোহাইড্রেট যা এনার্জি প্রদান করে।
মিনারেলস -  দুধে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস খুব বেশি মাত্রায় থাকে যা ভিটামিন ডি এর সাহায্যে হাড় গঠনের কাজে সাহায্য করে।
ভিটামিন - দুধে ভিটামিন বি১(থিয়ামিন), বি২(রাইবোফ্লেভিন) এবং বি১২ ভালো মাত্রায় পাওয়া যায়। ভিটামিন বি খাবার থেকে শক্তি সংগ্রহের কাজে সাহায্য করে ।
বাজারে যে সমস্ত দুধ পাওয়া যায় সেগুলো প্রধানত গরু-মোষের দুধকে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে তাদের উপাদানের (প্রধানত ফ্যাট এবং সলিড নন ফ্যাট) মাত্রা সঠিক করে বাজারজাত করা হয়। এদের মধ্যে ফ্যাট এবং সলিড নন ফ্যাটের মাত্রা কেমন থাকে পাশের টেবিল থেকে তার একটা আন্দাজ পাওয়া যায়

দুধ প্রস্তুতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

পাস্তুরাইজেশন - দুধকে ৬৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় কমপক্ষে ৩০ মিনিটের জন্য অথবা ৭১.৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় কমপক্ষে ১৫ সেকেন্ডের জন্য গরম করে জীবাণুমুক্ত করার পদ্ধতিকে বলে পাস্তুরাইজেশন।
আরও একটি পদ্ধতি আছে যাকে আল্ট্রা হাই টেম্পারেচার ট্রিটমেন্ট (UHT) ১৩৫ থেকে ১৩৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রায় ১ থেকে ২ সেকেন্ডের জন্য গরম করা হয়। এই পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত করার পর সঙ্গে সঙ্গে দুধকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে প্যাকেজিং করা হয়। একে  অ্যাসেপটিক প্যাকেজিং বলে।   হোমোজিনাইজেসন - দুধের মধ্যে যে ফ্যাট থাকে তাদের কণাগুলোকে ছোট ছোট করে ভেঙে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় যাতে তারা একত্রিত হয়ে সর বা ক্রিম হিসেবে দুধের উপর ভেসে উঠতে না পারে। এই পদ্ধতিকে বলে হোমোজিনাইজেসন। একটা চলতি ধারণা আছে, দুধে সর বেশি না পড়লে সে দুধ নাকি খারাপ, এটা ঠিক না। হোমোজিনাইজেশনড মিল্কে সর কম পরে।
স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন - ফ্যাট এবং সলিড নন ফ্যাটের অনুপাতকে নির্দিষ্ট করবার জন্যে মিল্ক সলিডের পরিমাণকে বাড়িয়ে-কমিয়ে সঠিক করার পদ্ধতিকে বলে স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন।
দুধ থেকে তৈরি বিভিন্ন খাবার
ফ্লেভার্ড মিল্ক দুধের সঙ্গে বিভিন্ন ফ্লেভার বা উপাদান মিশিয়ে তৈরি হয় ফ্লেভার্ড মিল্ক। এলাইচি, কেশর ইত্যাদি নানা রকমের ফ্লেভার্ড মিল্ক বাজারে দেখতে পাওয়া যায়।
ক্রিম দুধকে কিছুক্ষণ রেখে দিলে ওপরে যে সর ভেসে উঠতে দেখা যায় সেটাই দুধের ক্রিম। ক্রিম আসলে দুধের ফ্যাট, হালকা বলেই ওপরে ভেসে ওঠে। দুধ থেকে ফ্যাট বা ক্রিমকে আলাদা করার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে তবে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য সেন্ট্রিফিউজ পদ্ধতি বেশি ব্যবহার করা হয়। ফ্যাটের মাত্রা অনুযায়ী ক্রিমকে লো ফ্যাট, মিডিয়াম ফ্যাট, এবং হাই ফ্যাট তিন রকম ভাগে ভাগ করা হয়। এদের মধ্যে ফ্যাটের পরিমাণ যথাক্রমে ন্যূনতম ২৫, ৪০ ও ৬০  শতাংশ হয়।
কেক বা পেস্ট্রির ডেকোরেশনের যে ক্রিম ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে হুইপড ক্রিম বলে। ক্রিমকে ফেটিয়ে ভিতরে হওয়া ভরে দেওয়া হয় যাতে ক্রিম ফোমের মতো ফুলে ওঠে।
বাটার বা মাখন -  ক্রিমকে চারনিং করে বাটার বা মাখন তৈরি করা হয়। চারনিং এর বাংলা শব্দ মন্থন হতে পারে। ক্রিমের মধ্যে যে ফ্যাট থাকে তাকে এই পদ্ধতিতে আরো ঘন করা হয়। মাখনের মধ্যে ফ্যাটের পরিমাণ ন্যূনতম ৮০ শতাংস হয়।
মাখনের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে তৈরি হয় সলটেড বাটার যা আমাদের বাড়িতে দেখতে পাওয়া যায়। বাটার তৈরিতে যে ক্রিম ব্যবহার করা হয় অনেক সময় রাইপেণীং  বা ফার্মেন্টেশন করে নেওয়া হয়। এর থেকে যে বাটার তৈরি হয় তাকে রাইপেনড ক্রিম বাটার বলে। এতে বেশ একতা অন্যরকম ফ্লেভার থাকে। 
বাটার মিল্ক বা ছাস ক্রিমকে চারনিং করে বাটার বা মাখন তৈরি করার পর যেটা পড়ে থাকে তাকে বাটার মিল্ক বলে। বলাইবাহুল্য বাটার মিল্ক এর মধ্যে ফ্যাটের পরিমাণ বেশ কম। এর সঙ্গে লবণ, মশলা ইত্যাদি মিশিয়ে প্যাকেটজাত করে বিক্রি হয়।
ঘি ঘি প্রধনত ক্রিম বা বাটার থেকে তৈরি হয়। প্রায় সবটুকু জল এবং সলিড নন ফ্যাটকে দূর করে দিয়ে ঘি তৈরি হয়। ঘিকে রেফ্রিজারেশন ছাড়াও বেশ অনেকদিন পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা যায় যেটা ক্রিম বা বাটারকে রাখা যায় না। ঘিয়ের মধ্যে ফ্যাটের পরিমাণ খুব বেশি, প্রায় ৯৯.৫ থেকে ৯৯.৮ শতাংশ হয়।
দই দুধকে ল্যাকটিক অ্যাসিড বা অন্য কোন ঊপযুক্ত ব্যাকটেরিয়া কালচার দিয়ে ফারমেন্ট করে দই তৈরি করা হয়।আমরা বাড়ীতে দুধকে হালকা গরম করে তার মধ্যে অল্প একটু দই এর সাজা মিশিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিলেই দই তৈরি হয়ে যায়। প্রোবায়োটিক দই ইদানীং বাজারে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। একটা বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া কালচার দিয়ে প্রোবায়োটিক দই বানানো হয় ।
কাপড় করে বেশ অনেকক্ষণ ঝুলিয়ে রেখে জড়িয়ে নিয়ে তারপর সেটাকে ভালো করে ফোটানো হয় তারপর তাকে চিনি কলা ফ্লেভার ইত্যাদি মিশিয়ে টক শ্রীখণ্ড দইকে কাপড়ে করে বেশ অনেকক্ষণ ঝুলিয়ে রেখে জল ঝরিয়ে নিয়ে তারপর সেটাকে ভালো করে ফেটানো হয়।তারপর তাতে চিনি , কালার, ফ্লেভার ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরি হয় টক-মিষ্টি শ্রীখণ্ড।
ছানা আমরা সবাই জানি  দুধের মধ্যে একটু  লেবু নিংড়ে দিলে ছানা কেটে যায়। লেবুতে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে। ল্যাকটিক অ্যাসিড দিয়েও ছানা কাটানো যায়।দুধকে সাইট্রিক বা ল্যাকটিক অ্যাসিড দিয়ে কোয়াগুলেট করে যে সলিড পাওয়া যায় তাকে ছেঁকে নিলে যেটা পাওয়া যায় তাকে বলে ছানা।
পনির - ছানার পর যে নামটা সবার মনে আসে তা হলো পনির। দুধকে ল্যাকটিক অ্যাসিড স্টার্টার ও রেনেট এনজাইম দিয়ে কোয়াগুলেট করে তার থেকে জল ঝরিয়ে নিয়ে চাপ প্রয়োগ করে পনির তৈরি করা হয়। পনিরকে সফট চিজও বলে।
শুধু পনির মানে বুঝবেন ফুল ক্রিম পনিরযাতে ফ্যাটের পরিমাণ ড্রাই মাটারের বেসিসে ৫০ শতাংশের বেশি। লো ফ্যাট পনিরেফ্যাটের পরিমাণ ড্রাই মাটারের বেসিসে পরিমাণ ১৫ শতাংশের কম। হাফ ক্রিম লেখার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
চিজ - অনেক রকমের চিজ রয়েছে। মোজারেলা, চেডার,গউডা ইত্যাদি। এক এক ধরনের চিজের বৈশিষ্ট্য এক এক রকম। কোনও চিজ ফ্লেভারের জন্য পরিচিত, কোনও চিজ  টেক্সচারের জন্য। পিৎজাড় উপরে এক ধরনের চিজ ব্যবহার করা হয় জা টানলে ইলাস্টিকের মতো বাড়ে। এটাও এক ধরনের চিজের বৈশিষ্ট।
দুধকে রেনেট এনজাইম ও ল্যাকটিক অ্যাসিড কালচার দিয়ে কোয়াগুলেট করে তার থেকে জল ঝরিয়ে নেওয়া হয়। তারপর তাকে বিশেষ পদ্ধতিতে   কাটিং , কুকিং, প্রেসিং আর রাইপেনিং করে চিজ তৈরি করা হয়।
প্রসেসড চিজ ইদানীং খুব শোনা যায়। এক বা একাধিক চিজকে মিশিয়ে তাদের প্রসেস করে বানানো হয় প্রসেসড চিজ। এতে ক্রিম,বাটার,বাটার অয়েল ইত্যাদি জিনিসও মেশানো হতে পারে।
বিভিন্ন চিজে ফ্যাটের পরিমান বিভিন্ন রকমের হয়। ড্রাই মাটারের বেসিসে ফ্যাট মোটামুটি ২০ থেকে ৪৮ শতাংশের মতো থাকে।
আইসক্রিম -  জিনিসটা প্রায় সবার প্রিয়। ক্রিম এবং অন্য মিল্ক প্রোডাক্ট এর সঙ্গে সুগার, ফ্লেভার, কালার ইত্যাদি ভালো করে মিশিয়ে তারপর সেটাকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে ফ্রিজিং করা হয়। ফ্রীজিং-এর সময় ভিতরে হাওয়া প্রবেশ করানো হয় যা মিশ্রণের ভেতর ঢুকে গিয়ে মিশ্রণটাকে ফুলিয়ে দেয় । আইসক্রীমে মিল্ক ফ্যাটের পরিমাণ ন্যূনতম ১০শতাংশ।
মনে রাখবেন আইসক্রিমের মধ্যে যে ফ্যাট থাকে তা পুরোটাই মিল্ক ফ্যাট। যদি ভেজিটেবিল ফ্যাট মেশানো থাকে তবে তাকে বলা হয় ফ্রোজেন ডেসার্টএটি দেখতে আইসক্রীমের মতোই।


দুধে আডাল্টারেশন বা ভেজাল ধরবেন কি করে ?

Milk-cheese

ইচ্ছাকৃত ভাবে দুধে কোন পদার্থ মেশানো বা বার করে নিয়ে দুধের গুণগত মানকে খারাপ করা হলে তাকে বলা হয় আডাল্টারেশন।
(১)জল - দুধে জল মেশানো হয় পরিমাণ বা আয়তন বাড়ানোর জন্য।
(২)ডিটারজেণ্ট এটি দুধে মেশানো হয় দুধকে বেশিক্ষণ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার জন্য।
(৩)স্টার্চ দুধে স্টার্চ মেশানো হয় দুধকে ঘন করার জন্য।
(৪)সুগার -  সুগার মেশানো হয় যতে দুধে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে দুধের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
(৫)ফরমালিন - ফরমালিন এক ধরনের প্রিজারভেটিভ। এটি দুধে মেশানো হয় দুধ অনেকক্ষণ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার জন্য ।ফরমালিন লিভার ও  কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
(৬)ইউরিয়া ইউরিয়া দুধে মেশানো হয় দুধের সলিড নন ফ্যাটবাড়ানোর জন্য।
(৭)অ্যামোনিয়াম সালফেট - অ্যামোনিয়াম সালফেট মেশানো হয় দুধের লাকটোমিটার রিডিং বাড়ানোর জন্যে।
এছাড়াও দুধে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, বোরিক অ্যাসিড, সল্ট ইত্যাদি আডাল্টারেশন হিসেবে মেশানো হয়।

দুধে জল মেশানো হোলে খুব সহজেই তা বাড়িতে বসে ধরা যায়। কাচের গ্লাসে প্রত্যেক বাড়িতেই থাকে। গ্লাসটিকে কাত করে ধরে এক ফোঁটা দুধ গ্লাসের বাইরের দেওয়ালে গড়িয়ে দিন। যদি দেখেন দুধের গড়ানোর পথে একটি সাদা দাগ থেকে যাচ্ছে তবে বুঝবেন দুধ খাঁটি, জল মেশানো হয়নি। আর যদি দেখেন দুধের গড়ানোর পথে কোন দাগ পড়েনি কিংবা পড়লেও দাগটি খুবই হালকা তবে বুঝবেন দুধে অবশ্যই জল মেশানো হয়েছে। এবার কারণটা ব্যাখ্যা করা যাক। দুধ যেহেতু স্নেহজাতীয় পদার্থ তাই এর গড়ানোর পথে দাগ থেকে যাবে। দাগটি শুকিয়ে গেলে খুব ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন অত্যন্ত ছোট ছোট দুধের কণা ওই পথে লেগে রয়েছে ।আর জল যেহেতু স্বচ্ছ তাই গড়িয়ে যাওয়ার পথে সব ধুয়ে নিয়ে যায়। কোন দাগ লেগে থাকবে না। আরও একটা পরীক্ষা করতে পারেন। রান্নাঘরে যদি কালো গ্রানাইট এবং অন্য কোন ধরনের পাথর থাকে তবে তার ওপর এক ফোঁটা দুধ ফেলে দেখুন ওই ফোঁটার চারিধারে কোন স্বচ্ছ জলের রেখা দেখা যাচ্ছে কি না। যদি দেখা যায় তবে জল মেশানো হয়েছে ।আর দেখা না গেলে দুধ খাঁটি। জল দুধের তুলনায় কম ঘন হওয়ায় এটা দ্রুত দুধের বিন্দুর বাইরের পরিধির দিকে সরে যায়। আর দুধটা মাঝখানে থেকে যায়।
এবার দেখা যাক দুধে ডিটারজেন্ট মেশালে টা কিভাবে ধরা যায়। একটা কাচের গ্লাসে কিছুটা দুধ নিয়ে সমপরিমাণ জল মেশান তারপর মুখটা আটকে জোরে জোরে ঝাঁকান। ঝাঁকানোর পর যদি দেখেন অস্বাভাবিক ফেনা হয়েছে তবে বুঝবেন ডিটারজেন্ট পাউডার মেশানো হয়েছে ।কারণ দুধ হাজার ঝাঁকালেও ফেনা হওয়ার কথা নয় ।হলেও খুব সামান্য ফেনা হবে এবং তা চোখে লাগার মত নয়। আর ডিটারজেন্ট পাউডার জলে মিশিয়ে ঝাঁকালে ফেনা টো হোবেই। এবার দেখা যাক দুধে কেন ডিটারজেন্ট পাউডার মেশানো হয়। আসলে দুধ বেশি দিন রেখে দিলে কেটে যায়। কেটে যাওয়ার কারণ হল অ্যাসিডকে ফর্ম করা। অ্যাসিডকে নিউট্রালাইজ করে বেস বা  ক্ষার ।সেই ক্ষার হল ডিটারজেন্ট পাউডার।ফলে ডিটারজেন্ট পাউডার মেশানো দুধ দুধ বেশিদিন ঠিক থাকে।চট করে কাটে না। কিন্তু না কাটলেও সেই দুধে কিন্তু জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া বাসা বেধেছে বলে নিশ্চিত হতে পারেন এবং এই ধরনের দুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এইরকম পুরনো দুধ খেলে শরীরে নানা ধরনের রোগ হতে পারে।

ঘি ও মাখনে আডাল্টারেশন বা ভেজাল ধরবেন কি করে ?

Ghee-Butter

ঘি ও মাখনে সাধারণত আলু সিদ্ধ করে বা স্টার্চজাতীয় কোনও বস্তু ভেজাল হিসেবে দেওয়া হয়। তাছাড়া কৃত্রিম রং ও গন্ধও ব্যবহৃত করা হয়। আলু কিংবা স্টার্চ জাতীয় বস্তু ভেজাল হিসেবে ব্যবহৃত হলে তার সঙ্গে রং মেশাতেই হবে। প্রথমে বলা যাক স্টার্চ জাতীয় পদার্থ মেশালে কিভাবে ভেজাল ধরবেন সে বিষয়ে। আয়োডিন নামের রাসায়নিক যে কোন ওষুধের দোকানেই কিনতে পাওয়া যায়। ভেজাল ঘি কিংবা মাখনের কিছুটা স্যাম্পল নিয়ে তাতে এক ফোঁটা আয়োডিন ফেললে ঘি অথবা মাখনের রং নীল হয়ে যাবে। যদি একান্তই আয়োডিন না পাওয়া যায় তবে একটা চামচে করে কিছুটা ঘি আথবা মাখন ওভনের ওপর চরা আঁচে ধরলে, পোড়ার সময় যদি চড়চড় করে শব্দ হয় তবে বুঝবেন কিছু না কিছু গড়বড় আছে।
এবার আসি কৃত্রিম রং ও গন্ধ বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হয়েছে কি না তা কীভাবে ধরা যাবে এবং সে ব্যাপারে। ঘি বা মাখনের রং ঈষৎ হলদেটে হয়।তার কারণ ঘি ও মাখনে কয়েকটি ভিটামিনের উপস্থিতি। সেগুলো না থাকলে বাইরে থেকে হলুদ রং মেশানো হয়। এই রংগুলি জলে দ্রবীভূত হয়। তাই একটি কাঁচের গ্লাসে ঘি বা মাখন নিয়ে জল দিয়ে ঝাঁকাল যদি দেখেন দ্রবণের রং হলদে হয়ে গিয়েছে তবে বুঝতে হবে যে কৃত্রিম রং মেশানো হয়েছে। অবশ্য অল্প কিছু ক্ষেত্রে তেলে দ্রবীভূত হয় এমন রংও মেশানো হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ওই আগুনে গরম করে দেখতে হবে চড়চড় শব্দ করছে কি না। করলে তখন রসায়নাগারে  দিতে হবে পরীক্ষা করে দেখার জন্য। সেখানে কালার এক্সট্র্যাকশন পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে দেখবে কৃত্রিম রং দেওয়া হয়েছে কিনা।

পনিরের আডাল্টারেশন বা ভেজাল ধরবেন কি করে ?

 
Paneer

পনিরের সঙ্গেও স্টার্চ, আটা বা ময়দা ভেজাল দেওয়ার রেওয়াজ আছে। এটা ধরার জন্যেও আয়োডিন পরীক্ষা করাই শ্রেয়। তবে পনিরের ক্ষেত্রে একটা কাচের গ্লাসে জলের মধ্যে কিছুটা পনির গুলে নিতে হবে। পনির খাঁটি হলে চট করে গুলবে না । কিন্তু আটা-ময়দা মেশানো থাকলে কিছুটা অংশ জলে গুলে জলটাকে সাদা করে দেবে। এবার এক ফোঁটা আয়োডিন ফেললে যদি দেখেন জলটা নীল হয়ে গেল তাহলেই বুঝতে পারবেন যে পনিরটা খারাপ। এই খারাপ পনির খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ এতে যে আপনি শুধু আর্থিকভাবে ঠকছেন তাই নয়, পনিরের সঙ্গে আটা - ময়দা মেশানো হলে ধরেই নিতে হবে যে পনিরের সেল্ফ-লাইফের কাছাকাছি আটা ও ময়দার সেল্ফ-লাইফ আনতে ফরমালিন মেশানো হয়েছে। বেশি পরিমাণে সরবিক অ্যাসিডও মেশানো হয়ে থাকতে পারে। ফরমালিন এবং অত্যাধিক পরিমাণে সরবিক অ্যাসিড দুটোই শরীরের পক্ষে চরম ক্ষতিকর।
মিস্টি দই  বা ঘিতে মেশানো হয় বনস্পতি, রাবড়িতে ব্লটিং পেপার, ইত্যাদি।

No comments:

Post a Comment