গ্রহশান্তি বিধান-ব্যবস্থা
ভাগ্য পরিবর্তনে রত্নের ভূমিকা
গ্রহ অশুভ হলে তার প্রতিকারে রত্নের ব্যবহার বহুযুগ থেকে
চলে আসছে। তবে হাত দেখে সঠিক
রত্ন নির্বাচন করা নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ। কুষ্ঠি
ঠিকুজী ও দশাদি বিচার করে ধারণ করলে তা আরও কার্যকারী হয়। রত্ন
ধারণ ছাড়াও ঈশ্বর
আরাধানা, গ্রহদের মন্ত্র , ঈষ্টমন্ত্র প্রভৃতি জপ করলেও গ্রহের অশুভ ফল প্রতিকারে ভালো ফল পাওয়া যায়।
রত্ন ছাড়াও গ্রাহকবচ, গ্রহমূল, গ্রহধাতু প্রভৃতিতেও উপকার পাওয়া যায়। আমাদের শরীরে
অস্থি, মেদ মজ্জা,
রক্ত, ত্বক, শিরা
ও বীর্ঘ এই সাতটি প্রধান উপাদানে গঠিত। এর মধ্যে
শিরার
পরিচালক শনি, অস্থির পরিচালক রবি, রক্তের পরিচালক চন্দ্র, মজ্জার অধিপতি মঙ্গল, মেদের অধিপতি বৃহস্পতি, বীর্যের অধিপতি শুক্র ও ত্বকের অধিপতি বুধ বলে পরিচিত। এছাড়া মস্তকের অধিপতি রাহু ও দেহের নিম্নভাগের অধিপতি কেতু।
নির্দিষ্ট রত্ন বা শিকড়াদি গ্রহের কুপ্রভাবযুক্ত জ্যোতিষকে বিনষ্ট করতে পারে বা তাকে সুপ্রভাবে
পরিণত করতে পারে।যখন কোনও গ্রহের শক্তি মানুষের খারাপের দিকে নিযুক্ত হচ্ছে বোঝা যায় তখনই তাকে আটকাবার জন্য রত্নধারণ প্রয়োজন। জ্যোতিষীরা বলেন, রত্নে গ্রহের ক্রিয়া হয়ত একেবারে নষ্ট হবে না, কিন্তু তার শক্তি কমে যাবে।
রত্নের বাছাই হবে গ্রহ অনুযায়ী।
রবি খারাপ হলে চুণী বা মাণিক্য।
চন্দ্র খারাপ হলে মুক্তা।
মঙ্গল খারাপ হলে প্রবাল।
বুধ খারাপ হলে পান্না।
বৃহস্পতি খারাপ হলে পোখরাজ।
শুক্র খারাপ হলে হীরা।
শনি খারাপ হলে নীলা।
রাহু খারাপ হলে গোমেন।
কেতু খারাপ হলে ক্যাট্স আই।
১। রবি বিরুদ্ধ বা অশভ হলে
রত্ন: আসল মাণিক্য
( Ruby ) ধারণ বিধেয় – ২ রতি থেকে ৫ রতি।
সোনার আংটিতে শোধনান্তে ধারণ কর্তব্য। ধারণ দিনে অন্তত ৬০০০ বার এই মন্ত্রটি পাঠ করতে হবে :
ওঁ শ্রীং সূর্যায় নমঃ।
ধারণ করার পর্বে মাণিক্যের আংটিটি যজ্ঞভস্ম, গঙ্গা-মৃত্তিকা ও গঙ্গাজল দ্বারা ঘষে ও ধুয়ে নিতে হবে। ডান হাতের তর্জনী বা অনামিকায় ধারণ করা যেতে পারে। আসল মাণিক্যের গুণ :
(১) চোখ বুজে চোখের পাতার ওপর রাখুন এবং তার পর দেখুন ভীষণ ঠাণ্ডা লাগবে।
(২) আসল মাণিক্য নকল মাণিক্য অপেক্ষা ওজনেও ভারী হবে।
(৩) মাণিক্য আসল হলেও কোনরূপ দোষক (দাগযুক্ত, ফাটা, বা গর্ত যুক্ত ) ধারণ করা উচিত নয়।
অথবা,
উপরত্ন : সম ওজনের Spinel বা Garnet বা সূর্যকান্ত মণি ( Sun Stone) অথবা মাণিক্যের মতো রং যক্ত গোমেদ (Zircon )
শোধন ও পূজা প্রক্রিয়া : মাণিক্যের শোধন ও পূজা প্রক্রিয়ার অনুরূপ। যাদের পক্ষে অর্থনৈতিক কারণে মাণিক্য ধারণ অসম্ভব—তাঁরাই উপরত্ন ধারণ করবেন।
অথবা
মূল: বিল্বমূল
[পজা ও শোধন প্রক্রিয়া মাণিক্যের অনন্মরূপ ]
অথবা
ধাতু : তামার আংটি [শোধন ও পূজা প্রক্রিয়া মাণিক্যের অনরূপ ]
২। চন্দ্র বিরুদ্ধ বা অশভ হলে
রত্ন : মুক্ত (Pearl) ধারণ বিধেয় – ২, ৪ বা ৬ রতি।
যজ্ঞভস্ম, গঙ্গামত্তিকা ও গঙ্গাজল দ্বারা প্রথমে মুক্তার আংটিটি শোধন করে নিতে হবে।
মন্ত্র
ওঁ ঐং ক্লীং সোমায়;
জপসংখ্যা- ১৫০০০। জপান্তেতে রূপার বা সোনার আংটিতে ডান হাতের তর্জনী বা অনামিকা অঙ্গুলীতে ধারণ বিধেয়। দোষ বিহীন বসরাই মুক্তাই সর্বশ্রেষ্ঠ
অথবা,
উপরত্ন ঃ সম ওজনের চন্দ্রকান্ত মণি ( Moon Stone) যাঁদের পক্ষে অর্থনৈতিক কারণে মুক্তা ধারণ সম্ভব নয়, তাঁরাই উপরত্ন ধারণ করবেন। [ শোধন ও পজা প্রক্রিয়া মুক্তার অনুরূপ। রূপার আংটিতে ধারণ বিধেয়। ]
অথবা,
মূল : ক্ষীরাই মূল [ শোধন ও পূজা প্রক্রিয়া মুক্তার অনুরূপ। ]
অথবা,
ধাতু : শঙ্খের আংটি [ শোধন ও পূজো প্রক্রিয়া মুক্তার অনুরূপ। ]
৩। মঙ্গল বিরুদ্ধ বা অশভ হ'লে
রত্ন : প্রবাল ( Coral ) ধারণ বিধেয় ৫ থেকে ৮ রতি ।
মঙ্গলবার রূপার বা সোনার আংটিতে ধারণ করতে হবে। প্রথমে যজ্ঞভস্ম, গঙ্গামত্তিকা ও গঙ্গাজল দ্বারা আংটিটি শোধন করে নিতে হবে। তারপরে নিম্নলিখিত মঙ্গলের
মন্ত্র ৮০০০ বার জপান্তে আংটিটি ধারণ করতে হবে। আাংটিটি রূপার বা সোনার হতে পারে।
মন্ত্র ওঁ হূং শ্রীং মঙ্গলায়।
অথবা,
উপরত্ন : লাল রংয়ের Jasper, Garnet বা Amber ধারণ করা যেতে পারে।
[কিন্তু প্রবালের দাম কম; অতএব মার্থিক দিক থেকে প্রবাল ধারণ করা
খুব একটা অসুবিধাজনক নয়। শোধনও পূজো প্রক্রিয়া প্রবালের অনুরূপ ]
অথবা,
মূল: অনন্তমূল [শোধন ও পূজা প্রক্রিয়া প্রবালের অনুরূপ। ]
অথবা,
ধাতু : মঙ্গলের জন্য বিশেষ কোন ধাতুর ব্যবহার হয় না।
৪। বূধ বিরুদ্ধ বা অশুভ হ'লে
রত্ন : পান্না ধারণ বিধেয় ৩ থেকে ৫ রতি।
দোষবিহীন আসল পান্না ধারণ করতে হবে। রূপা বা
সোনার আংটিতে ধারণ করা যেতে পারে। প্রথমে যজ্ঞভস্ম, গঙ্গামৃত্তিকা ও গঙ্গাজল দ্বারা শোধন করতে হবে। তৎপরে নিম্নলিখিত বধের মন্ত্র জপান্তে যে কোন বুধবার ডান হাতের কনিষ্ঠা অগ,লীতে ধারণ করতে হবে।
মন্ত্র ওঁ ঐং স্ত্রীং শ্রীবুধায় ॥ জপসংখ্যা ১৭000।
উপরত্ন : একোয়ামেরীন বা সবুজ রংয়ের গোমেদ (Zircon ) অথবা ফিরোজা (রত্নের সমান ওজন হওয়া আবশ্যক)। [ আর্থিক কারণে যাঁদের পক্ষে পান্না ধারণ সম্ভব নয়, তাঁরাই কেবল মাত্র পান্নার বদলে উপরোক্ত উপরত্নের যে কোন একটি ধারণ করবেন। শোধন ও পজা প্রক্রিয়া পান্নার অনুরূপ। ]
অথবা,
মূল: বৃদ্ধ দারকের মূল [শোধন ও পূজা প্রক্রিয়া পান্নার অনরূপ।]
অবথা
সোনার আংটি [ শোধন ও পূজা ব্যবস্থা পান্নার অনুরূপ। ]
৫। বৃহস্পতি বিরুদ্ধ বা অশুভ হলে
রত্ন
পোখরাজ (Topaz ) ধারণ বিধেয়-৩ থেকে ৭ রতি। ওজন ৩ থেকে ৭ রতি। কিন্তু ৬ রতি ওজনের পোখরাজ ধারণ উচিত নয়। ৬ রতির বদলে ৫ বা ৭ রতি ওজনের পোখরাজ ধারণ করা যেতে পারে।
সোনার আংটিতেই পোখরাজ ধারণ করতে হবে। বৃহস্পতির জন্য সচরাচর পীত পোখরাজ ধারণ করা হয়। যজ্ঞভস্ম, গঙ্গামৃত্তিকা ও গঙ্গাজল দ্বারা প্রথমে পোখরাজের আংটিটি শোধন করে নিতে হবে। তৎপরে নিম্নলিখিত বৃহস্পতির মন্ত্রটি জপ করতে হবে।
মন্ত্র
ওঁ হ্রীং ক্লীং বৃহস্পতয়ে ॥ জপসংখ্যা— ১৯০০০।
অথবা,
উপরত্ন পতিমত্তা বা পীতবর্ণের গোমেদ ধারণ করতে হবে। [শোধন ও পূজা প্রক্রিয়া পোখরাজ অনরূপ। ]
অথবা
মল : ব্রক্ষ্মযষ্টির মূল [ শোধন ও পূজা ব্যবস্থা পোখরাজের অনুরূপ। ]
অথবা
ধাতু : বৃহস্পতির ধাতু হিসাবে মুক্তাই শাস্ত্রে উল্লেখিত। কোন ধাতু দ্বারা বৃহস্পতির শান্তি বিধান সম্ভব নয়।
৬। শূত্রু বিরুদ্ধ বা অশৰ্ভ হ'লে
রত্ন : হীরা (Diamond) ধারণ বিধেয়- ২.৫ সেণ্ট থেকে যত বেশী সম্ভব।
[ হীরা, প্লাটিনাম বা রূপার আংটিতে ধারণ করতে হবে। যজ্ঞভস্ম, গঙ্গামৃত্তিকা ও গঙ্গাজল দ্বারা শোধন করতে হবে।
মন্ত্র : ওঁ হ্রীং শূক্রায় ॥ জপসংখ্যা ১৭000।
আংটিটি ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলীতে ধারণ করতে হবে। ]
অথবা
উপরত্ন : সাদা পোখরাজ বা সাদা গোমেদ বা সাদা Tourmaline বা সাদা স্ফটিক ধারণ করা যেতে পারে [ অর্থাভাব জনিত কারণে যাঁদের পক্ষে হীরা
ধারণ সম্ভব নয়, তাঁরা তাঁদের আর্থিক সংগতি অনুযায়ী যে কোন একটি উপরত্ন ধারণ করতে পারেন। শোধন ও পূজা ব্যবস্থা হীরার অনরূপ। ]
অথবা,
মূল: সিংহপুচ্ছের ( বামবাসকের মল ) । [ শোধন ও পজা-ব্যবস্থা হাঁরার অনুরূপ। ]
অথবা,
ধাতু : রূপার আংটি [ শোধন ও পজা ব্যবস্থা হীরার অনুরূপ।]
৭। শনি বিরুধ বা অশুভ হ'লে
রত্ন : নীলা ( Sapphire) ধারণ বিধেয় – ৪ রতি থেকে ৭ রতি। [ স্টীলের তৈরি আংটিতে বা সোনার আংটিতে নীলা
ধারণ করা যেতে পারে। যজ্ঞভস্ম, গঙ্গামৃত্তিকা ও গঙ্গাজল দ্বারা প্রথমে আংটিটি শোধন করে নিতে হবে৷
মন্ত্র : ওঁ ঐং হ্রীং; শনৈশ্চরায় ॥ জপসংখ্যা ১০০০০। শনিবারে ডান হাতের মধ্যমা অঙ্গ,লীতে ধারণ করতে হবে।
অথবা,
উপরত্ন : নীল গোমেদ বা Amethiyst বা Lapis Lazuli বা নীল Garnet.
[ যাঁরা আর্থিক কারণে নীলা ধারণ করতে পারছেন না—তাঁরা আর্থিক সংগতি অনুযায়ী সম ওজনের যে কোন একটি উপরত্ন ধারণ করতে পারেন। শোধন ও পূজা প্রক্রিয়া নীলার অন্যরূপ।]
অথবা
মূল
শ্বেতবেড়েলার মূল [ শোধন ও
পূজা ব্যবস্থা নীলার অনুরূপ। ]
অথবা,
ধাতু: সীসার আংটি [ শোধন ও পজা ব্যবস্থা নীলার অনুরূপ। ]
৮। রাহূ, বিরুদ্ধ বা অশভ হ'লে
রত্ন
গোমেদ ধারণ বিধেয়– ৩ রতি থেকে ৭ রতি।
[ রূপার আংটিতে যে-কোন শনিবার ডান হাতের মধ্যমা বা কনিষ্ঠা অঙ্গুলীতে ধারণ করা যেতে পারে। প্রথমে আংটিটি যজ্ঞভস্ম, গঙ্গামৃত্তিকা ও গঙ্গাজল দ্বারা শোধন করে নিতে হবে। তৎপরে , ]
মন্ত্র : ওঁ ঐং হ্রীং রাহবে ॥ জপসংখ্যা ১২০০০।
অথবা,
উপরত্ন : গোমেদ।
মূল : শ্বেতচন্দনের
মূল [ শোধন ও পজা ব্যবস্থা গোমেদের অন্যরূপ।
]
ধাতু : লোহার আংটি [ শোধন ও পূজা ব্যবস্থা গোমেদের অনরূপ ]
৯। কেতু বিরুদ্ধে বা অশুভ হ'লে
রত্ন: বৈদূর্যমণি ( Cat's Eye ) ধারণ বিধেয়–৩ রতি থেকে ৭ রতি।
[ রূপার আংটিতে যে কোন শনিবার ধারণ করা যেতে পারে। যজ্ঞভস্ম, গঙ্গামৃত্তিকা ও গঙ্গাজল দ্বারা প্রথমে শোধন করে নিতে হবে—তৎপরে নিম্নলিখিত কেতুর মন্ত্রটি ১২০০০ বার জপ করতে হবে। মন্ত্র ওঁ হ্রীং ঐং কেতবে ॥ ]
অথবা,
উপরত্ন : সন ওজনের ব্যাঘ্রাক্ষ (Tiger's Eye ) ধারণ করা যেতে পারে।
[ যাঁদের পক্ষে আর্থিক কারণে Cat's Eye ধারণ করা সম্ভব নয়—তাঁরা ব্যাঘ্রাক্ষ ধারণ করতে পারেন। শোধন ও পূজা ব্যবস্থা বৈদূর্যমণি মণির অনুরূপ। ]
অথবা,
মূল
অশ্বগন্ধার মূল [ শোধন ও পূজা ব্যবস্থা বৈদূর্যমণি মণির অনুরূপ। ]
ধাতু : রাজপট্ট ( রারীযাটী ) [ শোধন ও পূজা-ব্যকথা বৈদৰ্য মণির অনুরূপ। ]
গ্রহশান্তি বিধান সম্পর্কে জানা
দরকার
যাঁরা আর্থিক কারণে নির্দিষ্ট গ্রহের জন্য নির্দিষ্ট রত্ন ধারণ করতে পারছেন না— তাঁরা উপরত্ন ধারণ করলেও তৎসহ গ্রহ-নির্দিষ্ট মূল ধারণ করবেন। রত্ন বা উপরত্নাদি যত বেশি
ওজনের ধারণ করা যায়— ততই বেশি কার্যকর হবে। শোধন ও পূজা-ব্যবথা কোন গ্রাচার্যে'র দ্বারাও সম্পন্ন করা যেতে পারে।
