কোন জল খাবেন !
কোন জল খাবেন, কীভাবে খাবেন, কতটাই বা খাবেন
গরম মানেই জল নিয়ে টানাপোড়েন।কোন জল খাবেন, কীভাবে খাবেন, কতটাই বা খাবেন। তবে সেই জলই খান, তা যেন ভালোভাবে পরিশোধিত হয়।একমাত্র আর্সেনিকমুক্ত অঞ্চলের জল ডীপ টিউবওয়েলের জল কোনও পরিশোধন ছাড়াই খাওয়া চলে। নানা ধরনের জোলের কথা এবার বলি।
ক্লোরিনেটেড ওয়াটার : শিয়ালদহ বা হাওড়া স্টেশনের জল খেয়েছেন ? যদি খেয়ে থাকেন তবে ওই জলে মেশানো ঝাঁঝালো ক্লোরিনের গন্ধের সঙ্গে নিশ্চয়ই পরিচিত হয়েছেন।কিন্তু অতিরিক্ত ক্লোরিন জল দীর্ঘদিন খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ভালো নয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে এক লিটার জলে আধ মিলিগ্রাম ক্লোরিন মিশিয়ে কমপক্ষে একঘণ্টা অপেক্ষা করার পর সেই জল খওয়া যেতে পারে। জলের সঙ্গে ক্লরিন বিক্রিয়া করে হাইপোক্লোরাস অ্যাসিড ও হাইপোক্লোরাইট আইওন তৈরি করে।এই হাইপোক্লোরাইটই হল জীবাণুনাশক।বাজারে যে জিওলিন পাওয়া যায়, তাতে থাকে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট। এক গ্লাস বা ২০০ মিলি জলে ৩-৪ ফোঁটা মেশালেই চলে। তবে সব ধরনের জল-জীবাণুকে ক্লোরিন ধ্বংস করতে পারে না। বেশি খেলে কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ফিল্টার ওয়াটার : বাজারে এখন রকমারি ফিল্টার। জলে মেশানো হেভি পার্টিকেলস এরা আলাদা করতে পারলেও জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা সাধারণ ফিল্টারের নেই। বাজারে এসেছে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র, যেখানে কার্বন ফিল্টারে সাহায্যে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ আলাদা করার পর আল্ট্রাভায়োলেট রেদিয়েশন দিয়ে প্রায় সব জীবানুই মেরে ফেলা হয়ে থাকে। তবে যে কোনও ফিল্টার মেশিন নিয়মিত সার্ভিস না করালে কিন্তু বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়।
মিনেরেল ওয়াটার : এটি প্রায় ক্ষেত্রেই একটি বিশুদ্ধ ধাপ্পাবাজি। একমাত্র ঝরনার জল বা স্প্রিং ওয়াটার,যাতে নানা প্রাকৃতিক লবণ মিশে থাকে, তাকেই বলে মিনারেল ওয়াটার। বিদেশে মিনারেল ওয়াটার বোতলে কোন পাহাড়ের কোন ঝর্ণার জল থেকে সেটি সংগৃহীত তা লেখা থাকে। এখানে এমনটি কেউই আশা করেন না। তবে জলটা জীবাণুমুক্ত হবে, দেহের পক্ষে প্রয়োজনীয় না না খনিজ লবণ তাতে সুষম পরিমাণে মেশানো থাকবে, এমনটা আশা করা কি অন্যায়, নগদ ১৫ থেকে ২০ টাকায় যখন এক লিটার মিনারেল ওয়াটার কিনতে হচ্ছে ! এখন তো পাড়ায় পাড়ায় মিনারেল ওয়াটার প্লান্ট বসিয়ে অনেকেই জল ব্যবসা শুরু করেছেন।সে জলে কি আছে কে জানে।
ফোটনো জল : দ্য বেষ্ট ড্রিংকিং ওয়াটার। সববেকি পদ্ধতিতে জল ফুটিয়ে খওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ। এতে জ্বালানি খরচ লাগে বটে, তবে ওষুধের খরচ বাঁচে। সংসারের অন্য খরচ থেকে কিছুটা ম্যানেজ করে জ্বালানি খরচে লাগান।উনুনে জল বসানোর পর সেই জলে বাবলিং বা বুদবুদ ওঠা শুরু হবে, সেই সময় থেকে পাক্কা কুড়ি মিনিট ফোটানোর পর জল নামাবেন। তারপর ঠাণ্ডা করে অন্য একটি পাত্রে ঢেলে নিয়ে ব্যবহার করবেন। বাসন-কোসন সেই ফোটানো জলেই ধুয়ে নেবেন, সম্ভব হলে তরিতরকারি, শাকসবজিও।
রঙিন জল : স্বাস্থ্যের পক্ষে কখনওই ভালো নয়। তা সে কোল্ড ড্রিংকই হোক বা রাস্তার রঙিন শরবত, কিংবা শিয়ালদা সাউথ সেকশনের ফটাস জল। কোল্ড ড্রিংকে নানা ধরনের অ্যাসিড, সোডিয়াম বা পটাশিয়াম ক্লোরাইড, প্রিজারভেটিভ মেশানো থাকে। মাঝেমধ্যে চলতে পারে, বেশি খেলেই বিপত্তি। রাস্তার আখের রস কখনও খাবেন না, ট্রেনে যে আমপোড়া শরবত বিক্রি হয়, সেই জলও পরিশোধিত নয়।
মনে রাখবেন, জলের বিকল্প আর কেউ নয়, শুধুই জলই এবং অবশ্যই বিশুদ্ধ জল। পথে-ঘাটে বেরতে হলে, বোতলে করে,ফোটন জল নিয়েই বেরবেন।দূরের পথে বেড়াতে গেলে জিওলিন জাতীয় ক্লোরিন পরিশোধক ব্যবহার করবেন। দিনে অন্তত ৩ লিটার জল খাবেন।