অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের অনিয়মে কি বিপদ বাড়তে পারে ?
অ্যান্টিবায়োটিক
সাধারণভাবে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়,ভাইরাসের বিরুদ্ধে
কোনো কাজ
করে না। তবে
অ্যান্টিবায়োটিক হল আরও
বড় জীবানু-নাশক, যার
মধ্যে আছে
নানা প্রকার
আন্টি-ভাইরাল
(ভাইরাস-নাশক
) আন্টি-ফাঙ্গাল
(ছত্রাক-নাশক)
ইত্যাদি।
অ্যান্টিবায়োটিকের
ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে
রাখা প্রয়োজন। মনে
রাখতে হবে
যে, অ্যান্টিবায়োটিক
শুধুমাত্র অনুজীবের বিরুদ্ধে কাজ করে
অর্থাৎ যে
রোগ অনুজীবের
সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়, সেই
রোগ নিরাময়ে
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে
কোন লাভ
হবে না।
ভাইরাসঘটিত
রোগে অ্যান্টিবায়োটিকের
ব্যবহার অমূলক। ভাইরাসের
বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক
কোনও কাজে
আসে না। কারণ
অ্যান্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া
ও ছত্রাক
এর বিরুদ্ধে
কাজ করে। যেমন
ধরুন, আমাদের
সাধারন হাঁচি-কাশি জাতীয়
ঠান্ডা লাগা
(Common Cold) যেটা মূলত ভাইরাস
ঘটিত।
করোনাভাইরাস(Coronavirus), রাইনোভাইরাস(Rhinovirus) ইত্যাদি সাধারণত
এজন্য দায়ী। এদের
বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক
কাজ করে
না ।
তাই অ্যান্টিবায়োটিক
ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে,
যেখানে ঠিক
যেরকম অ্যান্টিবায়োটিক
দরকার সেই
অ্যান্টিবায়োটিকই প্রয়োজনমাফিক ব্যবহার
করতে হবে। চিকিৎসক
যখন অ্যান্টিবায়োটিক
খাওয়ার পরামর্শ
দেবেন, তখন
ডাক্তারের পরামর্শমতো সঠিক সময়ের ব্যবধানে
সঠিক পরিমাণে
এবং সঠিক
সময় পর্যন্ত
অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। যখনই
কোন ব্যক্তির
দেহে ব্যাকটেরিয়া
একটি বিশেষ
অ্যান্টিবায়োটিকবিরোধী হয়ে যায়,
তখনই যত
শীঘ্র সম্ভব
অন্য অ্যান্টিবায়োটিক
ব্যবহার করা
উচিত।
অ্যান্টিবায়োটিক কাজ
করে না এমন
অসুখ সাধারণ
ঠান্ডা, ইনফ্লুয়েঞ্জা(ফ্লু), বেশিরভাগ ধরনের
তীব্র ব্রংকাইটিস, গলা বসে
যাওয়া,সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে আসা, অধিকাংশ কানের ইনফেকশন ইত্যাদি। এই অসুখগুলোর ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বর্তমান পরিস্থিতি
বিশ্বের
অনুন্নত অঞ্চলে
অ্যান্টিবায়োটিকের সবচেয়ে অপব্যবহার
ঘটে।
এইসব দেশে
বিশেষভাবে গ্রামাঞ্চলে দক্ষ লোকের অভাবে
অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় সর্বত্রই
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা
হয়।
পৃথিবীর অনেক
অঞ্চলেই সাধারন
মাথাব্যাথা,পেটেরব্যাথা,জ্বর ইত্যাদির জন্য
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা
হয়।
অনেক ক্ষেত্রে
চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক
খেতে বলার
সময় ওই
অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে রোগীর
শরীরের ব্যাকটেরিয়া
আগেই প্রতিরোধী
হয়ে গেছে
কি না
পরীক্ষা করে
দেখেন না,
বা দেখার
সময় হয়
না।
অনেক সময়
আবার রোগের
শুরুতেই অ্যান্টিবায়োটিক
খাওয়ার উপদেশ
দেওয়া হয়,
হয়তো অ্যান্টিবায়োটিক
ছাড়াও রোগ
নিরাময় সম্ভব
ছিল।
এইসব কারনেই
অ্যান্টিবায়োটিকে-রোধী ব্যাকটেরিয়ার
টিকে থাকার
সম্ভাবনা বারিয়ে
দেয়।
উন্নত
বিশ্বেও এই
সমস্যা আছে। আমেরিকার
রোগ নিয়ন্ত্রণ
কেন্দ্র (Center For Diseases Control) সি ডি
সির এক
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সেখানে ডাক্তারবাবু
অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশন করছেন,
কানের সংক্রামণের
জন্য ৩০%,সাধারন ঠান্ডার
জন্য ১০০%,
গলাব্যথার জন্য ৫০%,যা একেবারে
অপ্রয়োজনীয়।
সাধারণত
আমাদের শরীরের
ইমিউন সিস্টেমের
কারণে দেহে
ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া সংখ্যা বাড়তে পারে
না।
রক্তের শ্বেতকণিকা
ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে অনবরত
ধ্বংস করতে
থাকে।
কখনও শরীরে
শ্বেতকণিকার আক্রমণ ঠিকভাবে কাজ করতে
না পারলে
বা বাধাগ্রস্ত
হলে আমাদের
শরীরে ব্যাকটেরিয়া
জনিত সমস্যা
দেখা দেয়। যার
একমাত্র সমাধান
সঠিক মাত্রায়
অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া।
অ্যান্টিবায়োটিক কি নিরাপদ ?
যে
কোনও রোগ
প্রতিরোধের জন্য যখন আপনি চিকিৎসকের
দ্বারস্থ হবেন,
তখনই আপনাকে
দেওয়া হয়
অ্যান্টিবায়োটিক। এ যেন বাঁচার
লড়াই! জন্ম
থেকেই মানুষের
শুরু হয়
বেঁচে থাকার
জন্য এ
লড়াই।
আর এ
লড়াইয়ে টিকে
থাকতেই নিতে
হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। যখন
যতটুকু লাগবে,
তার ব্যবহারে
খারাপ কিছু
না থাকলেও,
অহেতুক বা
অপ্রয়োজনীয় ব্যাবহার ক্ষতি ডেকে আনে
বইকি!
কোন
কোন ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়া
যাবে না ?
আপনার
যখন প্রয়োজন নেই, তখনও যদি অ্যান্টিবায়োটিক নেন, তাহলে যখন প্রয়োজন তখন আর অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। প্রতিবার অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরে কিছু ব্যাকটেরিয়া থেকেই যায় যেগুলি মরে না। এইসব ব্যাকটেরিয়া পরে নিজেদের পরিবর্তন ঘটায় এবং এগুলোকে মারা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে, এইসব ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী অ্যান্টিবায়োটিক আর এদের মারতে পারে না। এইসব ব্যাকটেরিয়াকেই বলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়াগুলিই বড় ধরনের ইনফেকশন ঘটাতে পারে। এইসব ব্যাকটেরিয়া থেকে নিরাময়ের জন্য তখন আরও শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় এবং সেইসব অ্যান্টিবায়োটিকের আরও বেশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে আর এইসব অ্যান্টিবায়োটিকের দামও বেশি। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া কার শরীরে থাকলে তার পরিবারের অন্যান্যদের মধ্যে অথবা সহকর্মীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে এই ব্যাকটেরিয়া থেকে বেশি সংখ্যক লোকের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবারও বলছি, প্রয়োজন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নিলে তা আপনার কোনও কাজে আসে না, বরং ক্ষতি করে। প্রয়োজন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নিলে হতে পারে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, পেট ও পাকস্থলীর ব্যথা,অ্যালার্জি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো বড় ধরনের সমস্যাও হতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক কি ফুল কোর্স শেষ করতে হবে ?
কোনও
রোগের ক্ষেত্রে
চিকিৎসক যদি
মনে করেন,
অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা
উচিত, তাহলে
ঠিকভাবেই খেতে
হবে।
এক্ষেত্রে কোর্স কমপ্লিট করা উচিত। যদিও
ব্রিটিশ মেডিকেল
জার্নালের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে শেষ করা
সবসময় উচিত
কি না
তা এখন
খতিয়ে দেখার
সময় এসেছে। পুরো
কোর্স শেষ
না করে
মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক
খাওয়া বন্ধ
করলে অ্যান্টিবায়োটিক
কাজ করে
না, এর
পক্ষে যথেষ্ট
যুক্তি তারা
দেখছেন না।
ওঁদের
মত, সুস্থ
বোধ করলে
অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যদি
থামিয়ে দেওয়া
হয়, তাহলে
সেভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের
ব্যবহার কমানো
সম্ভব হতে
পারে! যদিও
এ নিয়ে
আরও গবেষণার
প্রয়োজন আছে
বলে মনে
করছেন ওই
ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞমহল।
অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার আগে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন
ইদানীং
ছোটখাটো অসুখেই
আমরা অ্যান্টিবায়োটিক
খেয়ে ফেলি। কিন্তু
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া মটেই উচিত নয়। আর
অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার আগে
কিছু তথ্য
অবশ্যই জেনে
নেওয়া উচিত। এর
ফলে আপনার
আরোগ্য লাভের
প্রক্রিয়া যেমন সহজ হবে, তেমনি
কিছু অসস্তিকর
পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও
এড়ানো সম্ভব
হবে।
সেগুলি হল
–
(১) কেন এই ওষুধটি খাওয়া উচিত ?
অ্যান্টিবায়োটিক
গ্রহণ কোনও
হেলাফেলার ব্যাপার নয়। ঠিক
কী কারণে
এই অ্যান্টিবায়োটিক
আপনাকে দেওয়া
হল, অ্যান্টিবায়োটিক
না খেলেও
চলবে কি
না তা
ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে জেনে নিতে
হবে বৈকি!
দরকার ছাড়া
অ্যান্টিবায়োটিক নিলে অনেক
সময় শরীরের
ব্যাকটেরিয়া রেজিস্টেন্ট হয়ে যায় পরবর্তীতে
গুরুতর অসুখের
ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না।
(২) কখন খেতে হবে ?
ঠিক
কোন সময়ে
ঔষধ খাওয়া
ভালো হবে,
এটা চিকিৎসকই
বলবেন।
কারও কারও
ক্ষেত্রে দিনে
তিনবার খাবার
দরকার হতে
পারে।
কারও কারও
ক্ষেত্রে দু’বার।
ফলে ঠিক
কখন আপনার
প্রয়োজন, তা বলতে পারেন একমাত্র
চিকিৎকই।
নিজে কোনও
সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় ভালো।
(৩) অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার সময়ে কোনও খাবার এড়িয়ে চলতে হবে কি ?
কিছু
ওষুধ বিশেষ
কিছু খাবারের
কারণে খারাপ
প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
যেমন কোনও
কোনও অ্যান্টিবায়োটিকের
কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে দুগ্ধজাত
খাবার।
এ কারনে
ডাক্তারবাবুকেই জিজ্ঞেস করে নিতে হবে,
কোনও খাবারের
সঙ্গে এর
বিরোধ আছে
কিনা!
(৪) ওষুধের সঙ্গে কি বেশি করে জল খেতে হবে ?
জল
দিয়ে ওষুধ
খাওয়ার সময়ে
অনেকেই অনেক
বেশি পরিমাণে
জল খেয়ে
ফেলেন।
এতে পেটের
সমস্যা হবার
আগেই দ্রবীভূত
হয়ে যায়
ওষুধ।
এতে বমিভাব
দমন করা
যায়।
কিছু ক্ষেত্রে
বেশি করে
জল খাওয়াটা
জরুরী হতে
পারে, এটা
ওষুধকে শরীরে
শোষিত হতেও
সাহায্য করে।
(৫) প্রোবায়োটিক খাওয়ার কি দরকার আছে ?
অ্যান্টিবায়োটিক
শরীরের খারাপ
ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে ভালো ব্যাকটেরিয়াকেও মেরে ফেলে। ফলে
দেখা দিতে
পারে বদহজম,
ইউরিন ইনফেকশন,
অথবা ইস্ট
ইনফেকশন এর
মত অসুখ। এই
ভালো ব্যাকটেরিয়ার
অভাব পূরণের
জন্য প্রোবায়োটিক
আছে এমন
কিছু খাবার
খেতেই পারেন।
(৬) ওষুধ খেতে ভুলে গেলে কী করবেন ?
অনেকেই
সময়মতো ওষুধ
খেতে ভুলে
যান।
এক্ষেত্রে কী করণীয় তা আগেই
জেনে নিন। কারন,
কিছু ক্ষেত্রে
ওষুধের কথা
মনে পড়ার
সঙ্গে সঙ্গেই
খেয়ে নিতে
হয়।
আবার কিছু
কিছু ক্ষেত্রে
পরের ওষুধটা
খাওয়ার সময়
পর্যন্ত অপেক্ষা
করলে চলে। কোনও
কোনও ক্ষেত্রে
এক-আধবার
ভুলে গেলেও
খারাপ কিছু
হয় না,
কিন্তু কোর্সটা
কমপ্লিট করতেই
হয়।
(৭) কোর্স চলার মাঝখানে শরীর খারাপ লাগলেও কি ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে ?
রোগ
সেরে আপনি
ভালো অনুভব
করতে পারেন
কতদিন পর,
তা জেনে
নিতে পারেন
ডাক্তারের কাছ থেকে। শরীর
ভালো লাগছে
বলেই অ্যান্টিবায়োটিক
খাওয়া বন্ধ
করে দেবেন
না, কোর্স
কমপ্লিট করাটা
খুবই জরুরী। ওষুধ
খাওয়া শুরু
করার কিছু
দিনের মধ্যেই
যদি শরীর
ভালো না
হয়, তাহলে
হয়তো ওষুধ
পরিবর্তন করতে
হতে পারে
তাই ডাক্তারের
কাছ থেকে
সময় এটা
জেনে রাখুন।
(৮) কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে ?
সব
ওষুধেরই কিছু
না কিছু
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে।
কোনও ক্ষেত্রে
বেশি, কোনও
ক্ষেত্রে কম। কিন্তু
সবারই এ
ব্যাপারে জেনে
রাখা উচিত। এই
কারণে চিকিৎসকের
কাছ থেকে
জেনে নিন। তেমন
উপসর্গ দেখা
দিলে কী
করবেন, তাও
জেনে রাখুন।
(৯) ওষুধ ভেঙে খাওয়া যাবে ?
অনেকেই
ওষুধ খেতে
পারেন না,
তাঁরা ওষুধ
ভেঙে গুঁড়ো
করে খান। কিন্তু
এটা করার
আগেও ডাক্তারের
কাছ থেকে
জেনে নেওয়া
প্রয়োজন, কাজটা ঠিক হবে কি
না! কারণ,
অনেক সময়ে
ক্যাপসুল বা
পুরো ওষুধ
এক অবস্থায়,আবার গুঁড়ো
অবস্থায় আরেকভাবে
শরীরে শোষিত
হয়।
পুরো ওষুধ
গিলে খেতে
না পারলে,
গুঁড়ো না
করে ওই
ওষুধের লিকুইডটি
খেতে পারেন,
অবশ্য যদি
ডাক্তারবাবু বলেন।
(১০) অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে এই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া কি নিরাপদ ?
ডাক্তারকে
জানিয়ে দেওয়া
দরকার, আপনি
কী কী
ওষুধ নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে
কোনও ওষুধের
নাম ভুললে
চলবে না। অনেকেই
বার্থ কন্ট্রোল
পিল অথবা
টুকিটাকি অ্যালার্জির
ওষুধ, প্যারাসিটামল
বা নিয়মিত
চলছে এমন
সবের কথা
বলতে ভুলে
যান।
না, এটা
করলে সত্যি
চলবে না। সবই
বলে নিতে
হবে।
কিছু কিছু
অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে বার্থ
কন্ট্রোল পিলের
কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
আবার আয়রন
ট্যাবলেটে কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমিয়ে
দিতে পারে। তাই
জেনেশুনে ওষুধ
খান।
(১১) অ্যালার্জি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা আছে কী ?
অ্যান্টিবায়োটিকে
যদি কখনও
আপনার অ্যালার্জি
হয়ে থাকে
তবে ডাক্তারবাবুকে
সেটা জানাতে
ভুল করবেন
না।
ওই ওষুধ
এবং একই
ধরনের ওষুধের
প্রতি আপনার
অ্যালার্জি থাকতেই পারে।
কীভাবে
বুঝবেন যে এখন
অ্যান্টিবায়োটিক আপনার জন্য
সঠিক চিকিৎসা ?
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বুদ্ধিমান হোন। জেনে রাখুন, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কি করা উচিত।
(১)চিকিৎসক
কে জিজ্ঞাসা করুন আপনার সমস্যার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকই সবচেয়ে ভালো সমাধান কি না। তাঁকে জানান একবারে প্রয়োজন না হলে আপনি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে চান না।
(২)আপনার
সমস্যায় যদি কাজ না করে বা আপনার নিরাময়ের জন্য যদি দরকার না হয় তাহলে চিকিৎসককে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার জন্য চাপ দেবেন না।
(৩)অন্য
কোন সমস্যার জন্য প্রেসক্রাইব করা অ্যান্টিবায়োটিক আরেক সমস্যার বা অসুখের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন না। অথবা একজনের অ্যান্টিবায়োটিক আরেকজনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন না। এতে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে।
(৪)ব্যাকটেরিয়াঘটিত সমস্যা যাতে না হয়, সেজন্য সচেতন থাকুন। ভালো করে সাবান দিয়ে ও বেশি জল দিয়ে হাত ধোবেন। দরকারি সব ভ্যাকসিন নিয়ে রাখবেন।
অল্প বয়সে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়
আপনি
কি প্রায়ই
সর্দি,কাশি,
জ্বরের সমস্যায়
ভোগেন? আর
তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াটাকে প্রায় অভ্যাসে পরিণত
করে ফেলেছেন
? তাহলে এখনই
সাবধান হয়ে
যান।
চিকিৎসকরা বলছেন, যত অ্যান্টিবায়োটিক থেকে দূরে থেকে সময়
দিয়ে সমস্যা
কমানোর চেষ্টা
করবেন ততই
ভালো।
অল্প বয়সে
অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক
ডোজ পরবর্তীকালে
ডেকে আনতে
পারে ক্যান্সারের
সমস্যা।
অ্যান্টিবায়োটিকের
প্রভূত ব্যবহারে
নষ্ট হয়ে
যেতে পারে
রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা।
ফলে অল্প
বয়সে অতিরিক্ত
অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কোলনে
পলিপ ও
রেক্টামে কোলেরেক্টাল
অ্যাডেনোমার ঝুকি বাড়ে।এর
থেকেই ছড়িয়ে
পড়তে পারে
পেটের ক্যান্সার।
মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের নার্সেস হেলথ স্টাডি ১,২১,৭০০
জন নার্সকে
নিয়ে এই
গবেষণা করেছে। ১৯৭৬
সালে গবেষণা
শুরুর সময় যাঁদের
প্রত্যেকেরই বয়স ছিল ৩০ থেকে
৫৫ বছরের
মধ্যে।
গবেষণায় অংশগ্রহণের
পর থেকে
প্রতি দু
বছর অন্তর
তাদের বিভিন্ন
লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর, মেডিকেল হিস্ট্রি, অসুখে
রেকর্ড রাখা
হয়।
প্রতি চার
বছর অন্তর
তাঁদের ডায়েটের
রেকর্ড রাখা
হয়।
২০০৪ সালে
এদের মধ্যে
থেকে ১৬,৬৪২ জন
নার্সকে বেছে
নেওয়া হয়। যাঁদের
বয়স সেই
সময় ৬০
বা তার
কিছুটা বেশি
ছিল।
এঁদের ২০
থেকে ৫৯
বছর বয়স
পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক
খওয়ার রেকর্ড
নেওয়া হয়
এবং ২০০৪
সাল থেকে
২০১০ সাল
পর্যন্ত অন্তত
একবার কোলোনোস্কোপি
করানো হয়। এই
সময়ের মধ্যে
১১৯৫ জনের
অ্যাডেনোমার ধরা পড়েছিল। যারা
পরীক্ষার আগের
চার বছরের
মধ্যে অ্যাডেনোমার
খেয়াছেন তাঁদের
মধ্যে ক্যান্সারের
সমস্যা দেখা
দেয়নি।
কিন্তু যারা
আগের বছরগুলোতে
দীর্ঘ সময়
(কুড়ি থেকে
ত্রিশ বছরের
মধ্যে) অ্যাডেনোমার
খেয়াছেন তাঁদের
মধ্যে ক্যান্সারের
প্রকোপ লক্ষ্য
করা গিয়াছে। বিশেষ
করে যারা
কোনও দীর্ঘকালীন
অসুস্থতার কারণে টানা দুই মাসের
বেশি সময়
ধরে অ্যান্টিবায়োটিক
খেয়েছেন, তারা অ্যাডেনোমায় আক্রান্ত হয়েছেন
ও ক্যান্সারের
ঝুঁকি ৩৬
শতাংশ পর্যন্ত
বেড়ে গিয়েছে। অন্যদিকে,
যারা ২০
থেকে ৫০
বছর বয়সের
মধ্যে একবারও
অ্যান্টিবায়োটিক তাদের তুলনায়
যারা ২০-৩৯ বছর
ও ৪০-৫৯ বছর
বয়সের মধ্যে
অন্তত টানা
১৫ দিন
অ্যান্টিবায়োটিক খেয়াছেন তাদের
অ্যাডেনোমার ঝুঁকি ৭৩ শতাংশ বেশি।
কখন শরীরে আর কাজ করবে না অ্যান্টিবায়োটিক ?
মানব
সভ্যতাকে টিকিয়ে
রাখতে ও
এর সুরক্ষায়
চিকিৎসাবিজ্ঞান এক অন্যান্য ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু
এটি যখন
কাজ বন্ধ
করে দিচ্ছে
তখন তা
বড়ই চিন্তার
বিষয় হয়ে
ওঠে।
ভারতের
সেন্টার ফর
ডিজিজ ডাইনামিক্স
ইকনমিক্স অ্যান্ড
পলিসি পরিচালিত
‘ষ্টেট অব
ওয়ার্ল্ড অ্যান্টিবায়োটিকস
২০১৫’ – এ
বলা হয়
অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতার কারণে
২০৫০ সাল
নাগাদ ৩০০
মিলিয়ন মানুষ
মৃত্যুবরণ করবে। সময়ের সঙ্গে
রোগ প্রতিরোধের
চিকিৎসা ক্রমেই
কঠিন হয়ে
উঠবে।
অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না
করলে সামান্য
রোগেই মানুষের
মৃত্যু ঘটবে।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কী ?
শরীরে
রোগ সৃষ্টিকারী
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া
বেড়ে ওঠা
প্রতিরোধে এবং নিয়ন্ত্রণের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক
প্রয়োগ করা
হয়।
কিন্তু এটি
প্রয়োগের পরও যদি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি
নিয়ন্ত্রিত না হয়, তবে ওষুধ
কাজ করছে
না বলেই
ধরে নিতে
হবে।
বিশেষজ্ঞরা
জানান, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ার
রেজিস্টেন্স বা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বর্তমানে
বিশ্বে গ্লোবাল
হুমকি হয়ে
দেখা দিয়েছে।
অ্যান্টিবায়োটিক
যদি জীবাণুর
বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করতে না
পারে, তবে
মানুষ রোগে
আক্রান্ত হলে
সুস্থ হতে
পারবে না। সামান্য
সংক্রমণই প্রাণঘাতী
হতে পারে।
জেনে রাখুন
বহু
বছরের গবেষণায়
অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত হয়েছে। আরও
অনেক বছর
লেগেছে এগুলো
কে নিরাপদ
করতে।
এসব অ্যান্টিবায়োটিক
আধিকাংশ ব্যাকটেরিয়ার
অধিকার বিরুদ্ধে
কাজ করবে
বলেই নিশ্চিত
বিজ্ঞানীরা। এরা আরও শক্তিশালী
হয়ে ওঠার
আগেই নতুন
প্রকৃতির অ্যান্টিবায়োটিক
প্রস্তুত করার
প্রয়োজন।
এই ওষুধ
কাজ না
করলে সাধারণ
সংক্রমণ মারাত্মক
হয়ে উঠবে। চিকিৎসা
খরচ বেড়ে
যাবে, পাশাপাশি
মৃত্যুর ঝুঁকিও
বাড়বে।
আর আমরা
নীরব দর্শক
হয়ে হাত
কামড়াব।
শুধু আমেরিকাতেই
নানা সময়ে
সংক্রমণের কারণে প্রায় ২৩ হাজার
মানুষের মৃত্যু
ঘটেছে অ্যান্টিবায়োটিকের
অকার্যকারিতার কারণে। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের
মতে, এলোমেলো
ব্যবহারের কারণে শরীরে তা ঠিকমত
কাজ করছে
না।
তাই সঠিক
ওষুধ দেওয়ার
পরামর্শ দেন
বিজ্ঞানীরা। যেমন, ঠাণ্ডা-সর্দি
ভাইরাসের কারণে
হয়ে থাকলেও
অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন
অনেক চিকিৎসক!
আর নিজের
ইচ্ছামত ওষুধের
দোকান থেকে
কিনে দু-তিনটে ওষুধ
খাওয়ার প্রবণতা
কারও কারও
আছে! যা
খুবই ক্ষতিকারক।
অ্যান্টিবায়োটিক দিলে
চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করুন
-আমার
অ্যান্টিবায়োটিক কেন প্রয়োজন?
-এই অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলি কী?
-পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি যাতে না হয় সে জন্য আমি কি করতে পারি ?
-এই অ্যান্টিবায়োটিক আমি কোন পদ্ধতি খাব ? দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে ? খাবারের সঙ্গে ? খাওয়ার আগে, নাকি পরে ?
-আমি
অন্য যেসব ওষুধ খাই এই অ্যান্টিবায়োটিক কি সেগুলোর জন্য সমস্যা করবে ?
-কোন
নির্দিষ্ট খাবারের জন্য কি এই অ্যান্টিবায়োটিক সমস্যাজনক ?
-এই অ্যান্টিবায়োটিক কি ফ্রিজে রাখতে হবে? এগুলি আমি কীভাবে রাখব, বিশেষ কোনও উপায়ে, নাকি সাধারণভাবেই?
আপনার
যদি অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে সেগুলি সম্বন্ধে ভালোভাবে নিশ্চিত হোন। আপনি যদি বিশেষ কোন খাবার বা ডায়েট পদ্ধতি ফলো করেন, বা কোনও ওষুধ খান নিয়মিত, অথবা আপনার যদি কোন শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে তা আপনার অ্যান্টিবায়োটিক জন্য সমস্যাজনক কিনা তা জেনে নিশ্চিত হন। আর আপনি যদি গর্ভাবস্থায় থাকেন বা সন্তান ধারণের চেষ্টার মধ্যে থাকেন তাহলে সেটাও চিকিৎসককে জানিয়ে রাখুন।